Mistds Mourns Our Martyr
মিস্টডস শোকাহত শহীদ রাকিব হাসানের স্মরণে
রাকিব হাসান (২০১৫১৮০৩৮), এমই-১৩, সেশন ২০১৪-২০১৫, যন্ত্র-প্রকৌশল বিভাগ, এমআইএসটি
রাকিব হাসানকে আমরা যারা চিনি সবাই এক নামে বড় ভাই নামে ডাকি। সেটা বয়সে বড় হওয়ার দরুণ যে তা নয়। বরং তিনি প্রচন্ড সাহসী, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, দায়িত্বশীল ও অনেক যত্নশীল ছিলেন বলে আমরা ভালবেসে রাকিব ভাই বা বড় ভাই বলে ডাকতাম। আমরা যারা ওসমানী হল, এক্সটেনশন - এ, এর ৬ষ্ঠ তলায় ১৮ থেকে ২০ জন থাকতাম, তারা সবাই সহমত করবে যে রাকিব ভাই সবকিছুর কেন্দ্রমণী ছিলেন। কিছুক্ষণ পর পর সৌমিক, পিয়াস, আকিব, আরজু এসে বলবে,”কী খবর রাকিব ভাই? বাইরে যাবেন নাকি? ডিনার করতে যাবেন নাকি? কার্ড খেলবেন নাকি?” আমি এই কথা বলতে পারতেছি কারণ রাকিব ভাই তখন আমার পাশের রুমে অন্তুর সাথে থাকতেন। এমন কোন ঘটনা নাই আমার জানা মতে, যেটা আমরা যারা এক্সটেনশন - এ তে থাকতাম তখন, রাকিব ভাইয়ের সাথে শেয়ার করিনি বা তিনি জানতেন না। ভাইয়ের সেন্স অফ হিউমার এত প্রখর ছিল, যে তিনি যেমন হাসতেন, তেমন হাসাতেও পারতেন। আমাদের ফ্লোরের যাবতীয় ইনিশিয়েটিভ তিনি নিতেন। “এই চলো ঐ দিকে হেটে আসি, এই চল আজকে এইটা করি” ইত্যাদি ইত্যাদি ভাই বলেছেন তো আমরা রেডি। আমরা ঐ ফ্লোরে যারা থাকতাম, কিছু করার আগেও অনেক সময় তিনার সাথে কথা বলতাম, বিভিন্ন পরামর্শ নিতাম। সম্মান করে বড় ভাই তো এমনি ডাকতাম না তাকে!
উনাকে দেখতাম দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে, আর প্রচুর ঘুমাতেন সেই সময়। সপ্তাহ খানেক পর দেখি, উনি টাকা সেভ করে নতুন কোন গ্যাজেট কিনে আনসেন। ভাইয়ের একটা স্বভাব আমার সবচেয়ে ভাল লাগত যে তিনি খুবই ডেডিকেটেড ছিলেন। উনি ৪-২ তে টার্গেট নিয়েছিলেন যে এইবার ভাল রেজাল্ট করবেন। ঠিকই ৩.৬ কি ৩.৮ এর মত তুলে নেন ঐ টার্মে। উনি ছাত্র হিসেবেও ভাল ছিলেন। অনেক জটিল সমস্যাগুলো অনেক সুন্দর করে গোছায়ে বুঝাতেন আমাকে। উনার রুমে ঢুকলেও বুঝা যায় উনি কত গোছালো ছিলেন। আমি গত মাসেও উনার ভাড়া করা বাসা দেখতে গিয়েছিলাম। রুমে ছিল ওয়াশিং মেশিন, ইলেক্ট্রিক ওভেন, ফ্রিজ ও অন্যান্য সামগ্রী। আমি বললাম বিয়েটি তাহলে করে নেন এখন। হয়তোবা পরিবারেও কথা চলছিল বিয়ের। জীবণ টা যখন একদম গুছিয়ে নিলেন, তখনই কেন যেন তিনাকে পরোলোকে গমন করতে হল। কত হাস্যজ্জ্বল স্মৃতি আছে আমাদের সবার উনার সাথে! রাকিব ভাই একদিন বললেন,”ইফতেখার, তুমি আমি ভাল আছি। কেউ আমাদের ঐভাবে চিনে না। ভার্সিটি লাইফে অনেকেই সেলিব্রিটি ছিল। আমরা সাধারণ ছাত্র ছিলাম। কোন ভাবে একটা রেজাল্ট নিয়ে বের হলাম। একটা চাকরি করতেছি। অন্যান্যদের তুলনায় ভালই তো আছি, খারাপ কৈ?” এখন তো রাকিব ভাইকে সবাই চিনবে শহীদ রাকিব হিসেবে। এখন সব শেষে আপনিই সেলেব্রিটি।
মো: ইফতেখার সারওয়ার
যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগ, এমআইএসটি
এমই - ১৩
২০২১, ডিসেম্বর।
কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে মাত্রই এস.এস.সি. পরীক্ষা শেষে এলাম এক মাসের ছুটিতে। পরীক্ষা কেমন হলো? এক কথায় 'আস্তাগফিরুল্লাহ'।
ছুটিতে বাসায় এসে আমি আমার বাবার মুখে শুনি নতুন গান, "তোর জন্য টিউটরের খোঁজ লাগাইসি।"
সর্বনাশ।
আমার পক্ষ হতে কঠিন বিরোধ স্বত্ত্বেও আমার বাবা ও আমার রেজাল্ট কার্ডের অবস্থা নাছোড়বান্দা। আমাকে পড়তে বসিয়েই ছাড়বে। তাই, কোনমতে এক মাস উৎকৃষ্ট প্রকারের 'প্রোক্রাস্টিনেশন' তথা অ্যানিমে-কন, মিট, মুভি, কোচিং এর নামে মুভি ইত্যাদি দিয়ে টিউটরকে পিছাই একদম জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু সবার নসিবেই তো বাঁশ থাকে, তাই একপ্রকার 'ইন্ডিগ্নেশন' নিয়েই টিউটর ভাইয়ের সাথে দেখা করলাম।
আসলেন ভাই জানুয়ারির কোন এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে। লম্বায় ৬ ফুট ছুই-ছুই, চাপা কিন্তু একটু পাতলা দাঁড়ি, আর চোখের নিচে পুরা 'ইলিয়ড' লেখার মতো কালি।
আব্বুর সাথেই তারপর কথা। আব্বু বললেন যে উনি বুয়েট ছেড়ে এম.আই.এস.টি এ আসছেন। বললেন যে উনি সি.এস.ই. এর প্রথম বর্ষের ছাত্র। নাম?
শাইখ আসসাবুল ইয়ামিন।
কথা শেষে আমার রুমে গেলাম ডেমো ক্লাস নিতে, কেমনে জানি কথায় কথায় উনার ফোন বাজলো।
~কিরে, রিংটোন চিনি ক্যা?~
আমি জিগাই,
-"ভাই?"
-"বলো ভাইয়া?"
-"এইটা কোন অ্যানিমে এর রিংটোন?"
- (হাল্কা লজ্জার সুরে) "রাইসিং অফ দ্যা শিল্ড হিরো সিজন ২..."
সেইদিন থেকে প্রত্যেক ছুটিতে শুরু ডেইলি দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উনার সাথে পড়ার নামে গল্প। অ্যানিমে থেকে ক্যাল্কুলাস, গেনশিন ইম্প্যাক্ট থেকে গ্র্যাভিটেশনের ল, এম.আই.এস.টি থেকে মোলার কাউন্টিং, সব কিছু নিয়েই গল্প হইত পুরাদিন। ঈদের সময়েও বাসায় আমার আর আপুর রান্না খেয়েছিলেন।
আর পড়াশোনা? বাদই দেই ওইটা।
এমনে চললো ১ বছর, উনিও দ্বিতীয় বর্ষ আর আমিও ক্লাস ১২। দু'জনেরই ব্যস্ততায় আর কথা বলাও হয় না।
এখন সময় ২০২৪, ফেব্রুয়ারির ২৮/২৯ তারিখ।
লাইফ নিয়ে ডিপ্রেশনে পড়ে আমিও গন কেস। জীবনে উন্নতি সাধনের প্রতিজ্ঞায় জীমে যেতে গেলেই পাই মেসেজ, আমি এম.আই.এস.টি এর স্থাপত্য বিভাগে চ্যান্স পাইসি। সবার আগে জানাই বাবাকে, তারপর ইয়ামিন ভাইরে। আবারো কথা শুরু আগেরকালের মতোই। আন্ত-বিভাগ বিতর্কের দিনেও কথা হলো, ওরিয়েন্টেশনের দিনেও উনার উপর সেন্টি খাইসি। মিড-ব্রেকের আগেও একদিন ক্লাস শেষে ওসমানী হলের সামনে কথা হলো।
ঠিক ৪ মাস পর, ১৮ই জুলাই, ২০২৪।
আন্দোলনের খবরে টানা ২-৩দিন ঘুম হারানোর পর পোলাপানদের বলে দুপুর ১২টায় ঘুম দিলাম। উঠি ৩:৪৫ এর দিকে। গ্রুপ চ্যাটে শুনি, আমাদের সিনিয়র একজন মারা গেছেন।
-কে?
-ওইযে, যিনি ওরিয়েন্টেশনে স্পিচ দিসিলেন যে।
-কী?
-ইয়ামিন ভাই, সি.এস.ই ৪র্থ ইয়ার।
পোলাপানের কথা বিশ্বাস না হওয়ায় গেলাম উনার খোঁজে ফেসবুকে। দেখলাম, যত ভিডিও সংগ্রহণ করা হয়েছিল ওই দিনে……
পুরো চার ঘন্টা পর যেন আমি শ্বাস নিতে পারি। কাছের মানুষের বিদায় আমার কাছে নতুন কিছু নয়। মাকে হারিয়েছি কোভিড-১৯ এ, নানাকে হারিয়েছি ক্যান্সার পরবর্তী জটিলতায়, ঘুমের মাঝেই। কিন্তু ইয়ামিন ভাইয়ের মৃত্যুই যেন আমার কাছে ছিল.....অবিশ্বাস্য।
গেনশিন-খেলা, অ্যানিমে-প্রিয় আর ক্লাসে চিল মারা ইয়ামিন ভাই আজকে কেবল ছবির মধ্যেই প্রানবন্ত। নীরিহ, প্রায় শিশুতোষ একজন ছিলেন তিনি। তার সাথে আর কখনো বলা হবে না স্টার-রেইল নিয়ে। আর করতে পারবো না বিচিং। আর শুনবো না উনার এম.আই.এস.টি. এর গল্প। আর এক সেমেস্টার পরই ছিলো উনার গ্র্যাজুয়েশন।
সত্যি বলতে, আমার যা বলা উচিৎ বাকিরা সবই বলেছেন। শুধু একটাই কথা বলার ছিলো,
"ধন্যবাদ ইয়ামিন ভাই। একজন শহিদের ছাত্র ও জুনিয়র হয়ে আমি গর্বিত। আর আপনি মাথা ঘামায়েন না, এইবার রেস্ট নেন।"
ইতি,
ইয়াসিন আর রাসিফ
স্থাপত্য বিভাগ, এম.আই.এস.টি.
আর্ক-১০
Mistds Mourns Martyr Series-1
গত ১৮ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, রাকিব হাসান (২০১৫১৮০৩৮), এমই-১৩, সেশন ২০১৪-২০১৫, যন্ত্র-প্রকৌশল বিভাগ, এমআইএসটি ,মিরপুর ১০ নম্বর, মেট্রোস্টেশন থেকে পুলিশ এর ছোড়া গুলিতে নিহত হন। রাত ৯টার পর পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করলে রাকিব ভাই দুইজন মহিলাকে ও একজন বাচ্চা মেয়ে কে নিরাপদে অন্য দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎ একটি বুলেট তাঁর গলায় আঘাত করে। মাটিতে পড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং গোলাগুলির শব্দ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
রাকিব ভাইয়ের সাথে থাকা, মাসরুক পিয়াশ ভাই (সিএসসি - ১৫) তাঁকে দ্রুত পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু রাত ৯:২৩ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)
সম্পূর্ণ এমআইএসটি ছাত্র সমাজ এবং অ্যালামনাইরা রাকিব ভাইয়ের এই সাহসিকতায় অত্যন্ত গর্ববোধ করে এবং তাঁর এই সাহসিকতা সর্বদা স্মরণ করবে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা বিস্তারিতভাবে তার লেখাতে বর্ণনা করেছেন মাসরুক পিয়াশ ভাই।
একটি নির্ভুল স্বাধীনতার জন্য
(শহীদ রাকিবের শেষ ২৪ ঘন্টা )
১৮ জুলাই, ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সময় তখন রাত ১১:৫০ মিনিট।
আমার ফোন বেজে উঠল। আমি পুলকিত চোখে ফোনটা রিসিভ করলাম। ফোনের ওপাশ থেকে উৎকন্ঠাসহ একটা প্রশ্ন ভেসে আসল।
- হ্যালো পিয়াশ, তোমাদের ওখানে এখন কি অবস্থা? কোন খোঁজখবর জানো?
- বলতে পারছি নাতো রাকিব ভাই। অফিস থেকে এসে একটু ঘুমাইছিলাম। কেবল উঠলাম, নিচে নামিনি, নেটেও এখনো ঢুকা হয়নি।
- কিছুক্ষণ আগেই আমি তোমাদের ওদিকে ছিলাম। অবস্থা খারাপ। ১০ নাম্বারের ওদিকে পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ চলতেছে। পুলিশ টিয়ারশেল আর রাবার বুলেট ছুড়তেছে। আমি কিছুক্ষণ আগে বাইক নিয়ে ওদিকে ঘুরে আসছি।
- বলো কি, তুমি এতো রাতে বের হইছিলে? একা একা বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো, আমাকে বলবে না রাকিব ভাই? আমি আজ দিনের বেলায় অফিস পালিয়ে রিক্সা নিয়ে ঘুরে বেড়াইছি চারিদিক। মিরপুর ১২ থেকে DOHS, তারপর ১০ নাম্বারে গেছি। তোমার বাইকে ঘুরলে কতগুলো টাকা বেঁচে যেত আমার।
- চারিদিকের খবরাখবর দেখে আর থাকতে পারলাম না, তাই বের হয়ে গেছিলাম একটা রাবার বুলেটও লাগছে আমার বুকে। খুব জ্বালাপোড়া করছে একঘন্টা।
- হায়হায়, কি করে হইছে?
- বাইক নিয়ে বের হয়ে এদিক ওদিক ঘুরে ১০ নাম্বারের দিকে গেলাম। যেয়ে দেখি ছাত্ররা ঢিল ছোড়াছুড়ি করছে। আমিও বাইকটা একটু সাইড করে। কিছুক্ষণ ঢিল ছুড়লাম। কিন্তু ওদের রেঞ্জ তো অনেক বেশি। এতো দূর থেকে গুলি করছে আর টিয়ারশেল মারছে যে কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। এরমাঝে হঠাৎ একটা রাবার বুলেট লাগে আমার বুকে। প্রচন্ড জ্বলতেছিল, অনেক গরম ছিল মনে হলো। বেশ কিছুক্ষণ মালিশ করে বাইকটা নিয়ে চলে আসলাম।
-ইশ! আমিও আজ যখন রিক্সা নিয়ে ১০ নাম্বারের দিকে যাই। আমার সাথে থার্ড ইয়ারে পড়া একটা জুনিয়র ছিল, ওর নাম ফরহাদ। তখনও দেখি পুলিশের দিকে অরিজিনাল ১০ এর রাস্তা থেকে ঢিল ছুঁড়ছিল। পুলিশরা মেট্রো স্টেশনের নিচে এক মাথায় একটা ব্যুহ তৈরি করে রাবার বুলেট ছুড়ছিল। হঠাৎ দেখি মিরপুর ৬ এর রাস্তা দিয়ে BUBT এর স্টুডেন্টরা চলে আসলো। পুলিশ দুই দিক থেকে চাপে পরে প্রচুর রাবার বুলেট ছুঁড়তে থাকে আর টিয়ারশেলে এলাকা অন্ধকার করে ফেলে। প্রথমবারের মতো আমি টিয়ারশেলের ঝাঁঝ বুঝতে পারলাম, বেশ কিছুক্ষণ চোখ জ্বালাপোড়া করছে। আমার পাশের একটা ছেলে ছটফট করছিল, তার চোখটা লাল, টিয়ারশেল তার একদম সামনে এসে পড়েছিল। তারপরও এরা কত সাহসী! এর মাঝেও কয়েকজন পুলিশের অনেক কাছে চলে যায়। আমার বয়স এদের চেয়ে অনেক বেশি, আমি কেন যেন এদের সাথে মিশে যেতে পারছিলাম না। ওদের তারুণ্য আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিল ওরা একেকটা আগুনের স্ফুলিঙ্গ। এদিকে আমার ফরহাদের জন্য নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলাম। একই সাথে অফিসে ঢুকতে হবে বলে তারাতাড়ি চলে আসলাম। ভাবলাম আগামীকাল কোন একটা গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে আন্দোলনে পুরোপুরি যোগ দেয়া যাবে।
- বিভিন্ন জায়গায় ছেলেপেলে গুলো খুব মার খাচ্ছে। লীগের শুয়োরগুলো নাকি চর এলাকা থেকে অনেক মানুষ ভাড়া করে নিয়ে আসছে।
- হ্যা ভাই, আমি ১২ নাম্বারে আজ গিয়ে দেখি টোকাই ছেলেপেলেরা হাতে লাঠি নিয়ে পুলিশের সাথে ঘুরছে, একেকজন অনেক কম বয়সী। তুমি জান এদের হাতে MIST আর BUP এর ছেলেরা অসহায়ের মতো মাইর খাইছে? মিরপুর ১২ এলাকায় শুধু পুলিশ আর এই টোকাইদের দেখে শুরুতে ভাবলাম এখানে কিছু হয়নি। যদিও আজ MIST এর স্টুডেন্টদের বের হবার কথা ছিল। আমি ওদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতেই এসেছিলাম এখানে। কাউকে না দেখে আমি পুলিশদের সামনেই রিক্সা নিয়ে ওসমানী হলের দিকে যাই। রিক্সা থেকে ফরহাদ এডি ক্যান্টিনের সামনে একজনকে সালাম দেয়। পরে সে আমাকে জানায় যে ছেলেটা BUP তে পড়াশুনা করতো, এখন জব করে। অবাক করা ব্যাপার কি জানো রাকিব ভাই? ওসমানী হলের সামনে গিয়ে দেখি চুলে রঙ করা দুইজন ছেলে লাঠি হাতে ঘুরছে। এদিকে ওসমানী হলে আমাদের ছাত্রদের থাকতে দিচ্ছে না, হল বন্ধ করে বের করে দিচ্ছে সবাইকে। হলের আশেপাশে গুটিকয়েক মানুষ খুব স্বাভাবিক ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বুঝতেছিলাম না এদিকের অবস্থা কি। ছাত্ররা কোথায়? রিক্সা নিয়ে ফেরত আসার সময় ফরহাদকে বললাম তোমার ওই সিনিয়রকে রাস্তায় পেলে একটু দাড়িও তো, ওকে জীজ্ঞেস করে দেখি কিছু জানা যায় কিনা। ছেলেটাকে ভাগ্যজোরে পেয়েও গেলাম। রিক্সাটা ছেড়ে দিয়ে ওর থেকে জানতে পারলাম আমাদের ছাত্ররা খালি হাতে ওদের কাছে মার খাইছে। ধাওয়া খেয়ে ওরা DOHS এ ঢুকে, পেছন পেছন পুলিশও আসে। পুলিশ ভেতরে ঢুকার পর DOHS কর্তৃপক্ষ এলাকার গেট বন্ধ করে দেয়। ছেলেগুলো বদ্ধ জায়গায় আটকা পড়ে পুলিশের সামনে। কতবড় জানোয়ারের মতো কাজ করেছে বুঝতে পারছো? আরো জানতে পারলাম কয়েকজন ছাত্র নাকি ক্যান্টনমেন্টের প্রথম গেটে ঢুকে NDC এর সামনে আশ্রয় নেয়। পুলিশ নাকি এখানে এসে তাদের মারে। পরবর্তীতে CSE ডিপার্টমেন্টের হেড এদেরকে নিয়ে যায়। এখন স্টুডেন্টরা ছত্রভঙ্গ। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কেউ একত্র হতে পারছে না। আমার মনে হলো বাচ্চাগুলোর নেতৃত্বের অভাব। ওরা তো কোনদিন রাস্তায় নামেনি এভাবে, পড়াশুনা করা নিখাদ ভদ্র ছেলেমেয়ে। খুবই ভাল একটা উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলনে নামছে, কিন্ত জানেনা এই জানোয়ারগুলোর সাথে কিভাবে পরিকল্পনা করে আগাতে হবে। এরা সবাই ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ব্যবহার করে একসাথে মিলিত হচ্ছিলো একটা আদর্শের জোরে। সরকার নেট বন্ধ করে এদের দিশেহারা করে দিয়েছে। কেউ বুঝতেছে না এরপর কি হবে, কোথায় একত্রিত হবে? আমি ওদেরকে বললাম ছোট ছোট টিম বানাতে। তারপর টিমলিডাররা নিজেদের মধ্যে ফোনকলে যোগাযোগ করবে। বাকিরা টিমলিডারকে ফলো করবে। এতে করে ইন্টার্নেটের প্রভাব কমবে আন্দোলনে। আগেরযুগের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই আন্দোলন চালাতে হবে। এসব কথা শেষে জানতে পারলাম মিরপুর ১০ এর গোলচত্তরে ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ছে। আমরা আরেকটা রিক্সা নিয়ে ওদিকে চলে গেলাম। তারপরের ঘটনা তো তোমাকে আগেই বলে ফেললাম।
-একটা ক্যান্টনমেন্টে পুলিশ কিভাবে ঢুকে? সবজায়গায় সেটিং করে রাখছে। DOHS এর বাসা থেকে নাকি কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে ওরা।
-এতোদিনে তো কোঠা দিয়েই একে একে নিজেদের লোকদের সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে রাখছে। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। এখন তাই নিজেরা নিজেদের হেল্প করছে আর নীতি বিসর্জন দিয়ে সরকারের পা চাটতেছে। যাইহোক, এরপর কোথাও গেলে আমাকে অবশ্যই নিয়ে যাবে। দুইজন একসাথে ঢিল ছুঁড়ে আসব।
-আচ্ছা, আমি কাল বের হলে তোমাকে বলবোনি। রাখছি তাহলে।
-আচ্ছা
ফোনটা রাখার পরই আমার মনে হলো যে লোকটার গুলি লাগছিল! কতটা সাহস তার, একা একা বের হয়ে এসব করে বেরাচ্ছে। এদিকে সকাল থেকে আমি ভাবছিলাম কাকে নিয়ে বের হওয়া যায়। অথচ দুজন মিলে এতো বছরে কত দস্যিপনাই না করছি। মনে পরে, ফার্স্ট ইয়ারে ওসমানী হলের এক্সটেনশন ‘এ’ তে আমরা একই ফ্লোরে উঠলাম। ৬ষ্ট ফ্লোরে কোন দেয়াল ছিল না। কাঠ বোর্ডে কাঠবোর্ডের পার্টিশনটা সিলিং পর্যন্ত উঁচু না। তাই এখানে ১৭ জন মানুষের প্রাইভেসি বলে কিছু ছিল না। যেন প্রত্যেকেই প্রত্যেকের রুমমেট। রাত তিনটার সময় ৫ টাকা দামের লেক্সাস বিস্কিটের প্যাকেটটা খুললে সেই শব্দে ১৭ জন একজায়গায় হাজির হয়ে যেত। সবাই সবার সাথে পরিচয় পর্বের এক পর্যায় আমরা জানতে পারি রাকিব ছেলেটা সেকন্ডটাইম ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে আসছে। সবাই তাকে সম্মান দিয়ে ‘ভাই’ বলা শুরু করলো, এবং ‘আপনি’ করে সম্মোধন করতে থাকল। যদিও রাকিব ভাই বলেছিল তাকে নাম ধরে ‘তুই’ করে কথা বলতে। আমি নিলাম মধ্যপন্থা। আমি তার জন্য ‘ভাই এবং তুমি’ টাই পছন্দ করলাম। ফার্স্টইয়ারে দীর্ঘসময় দুজনের পাশাপাশি বেড ছিল। চারবছরে ছোটখাটো কত বিধিনিষেধ অমান্য করেছি আমরা। ফার্স্ট ইয়ারে সৌমিক, রাকিব ভাই আর আমি একবার হলের বেলকনি দিয়ে রাত ১টায় বের হয়ে যাই। মিলিটারিদের কাছে এটা কতবড় অপরাধ আমরা জানতাম। ডিওএইসএসে কিছুক্ষণ ঘুরে আমরা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত হেঁটে যাই। সেই রাতের ৪ ঘন্টায় ১৪ কিলোমিটারের জার্নিটা ভুলবার মতো নয়। সেকেন্ড ইয়ারে লাইব্রেরিতে বই জমা দেবার সময় জানতে পারি রাকিব ভাই ম্যাথ বইটা হারিয়ে ফেলেছে। সে নতুন একটা বই কিনেও এনেছে। কিন্তু লাইব্রেরী কর্তৃকক্ষ এটা নেবে না। তার কাছে জরিমানাসহ ১৮০০ টাকা দাবী করে। সেই রাতে আমি নতুন একটা বারকোড জেনারেট করি তার হারিয়ে যাওয়া বইয়ের নাম্বার অনুসারে। আমরা দুজনে মিরপুর ১২ তে গিয়ে সেইটা প্রিন্ট করে বইটা জমা দিয়ে দেই। পরিকল্পনা সফল। এই পদ্ধতিতে অনেকেই সেই সেমিস্টারে হারানো বই জমা দেয়। সেকেন্ডে ইয়ারে যখন জানতে পারলাম নবীন বরণে খাবার পেতে হলে আমাদেরকে টাকা দিতে হবে। আমরা রাগে ফুঁসে উঠলাম। গতবছর তো এমন নিয়ম ছিল না। ভর্তির সময় তো এসব বাবদ টাকা রেখেই দেয়। তাহলে এখন কেন এমন ছোটলোকি। আমরা বন্ধুদের কাছে থেকে কয়েকটা টোকেন সংগ্রহ করি। তারপর তার অনেকগুলো কপি বানিয়ে ফেলি। নবীন বরণের দিন অনেক বন্ধুকে খাইয়ে আমরা আরো অনেক খাবার নিয়ে আসি। রাস্তায় গরীব মানুষ সহ বিভিন্ন বাসায় দারোয়ানদের হাতে তুলে দেই। এমন বিশ্বস্ত সঙ্গীর সাথে একটা আন্দোলনে নামার চেয়ে নিরাপদ আর কিইবা মনে করতে পারি আমি?
১৯ জুলাই, ২০২৪, শুক্রবার, দুপুর ১২:৪০ মিনিট।
গতরাতে ঘুমাতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠেই ভাবছি রাকিব ভাই তো কল দেয়নি। একা একা আবার ঘুরছে বের হইছে নাকি। দুইবার ফোন করার পর রিসিভ করলে বুঝতে পারলাম যে সে ঘুমাচ্ছিল। অবাক হলাম না। আমাদের দুজনেরই এমন দেরী করে উঠার অভ্যাস আছে। কিন্তু আজ সে একবার সকালে বের হয়েছিল। উত্তরার ওদিক থেকেও ঘুরে আসছে। আমি খুব হতাশ হলাম আমাকে নেয়নি বলে। সে আমাকে বললো বিকেলে আমার এদিকে আসবে তখন একসাথে যাব কোথাও। আমি তার কথাটা নিশ্চিত করিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। দুপুরের খাবারের পর আবার একটা ভাতঘুমে নিমজ্জিত হলাম। একটু পরপর ঘুম ভাঙে আর ফোন হাতে নিয়ে নিয়ে দেখি রাকিব ভাই ফোন করেছিল কিনা। আসরের নামাজের সময় উঠে পরলাম। আমি রাকিব ভাইয়ের উপর প্রচন্ড বিরক্ত। ফরহাদকে বললাম আমি কিছুক্ষণের মধ্যে বের হবো। ফরহাদও যেতে রাজি হলো। আমি ভাবলাম মেছের বাজারটা শেষ করে ফরহাদকে নিয়ে বের হবো। কৌশিকের সাথে নিচে নামলাম বিকেল ৫ টার দিকে। মানুষজনের মধ্যে একটা উত্তেজনা দেখে আমি বাজারের রাস্তায় না গিয়ে মেইন রোডে গেলাম। মিরপুর ১১ এর মেট্রোস্টেশনের পাশেই আমার বাসা। কয়েকজন ছুটে আসছিল। তাদের মুখে জানা গেল গোলাগুলি চলছে। একদম আসল বুলেট। দুইজনের মতো আন্দোলনকারী নিহত। কিন্তু কোথায় থেকে গুলি আসছে কেউ বুঝতে পারছে না। বাজারে আর আমি যেতে চাইলাম না। কৌশিকও আমার কথায় সায় দিল। বেশ কিছুক্ষণ অবস্থা বুঝার চেষ্টা করতেই দেখি দশ নাম্বার থেকে কালো ধোঁয়া ভেসে আসছে। উত্তেজনায় আমি রাকিব ভাইকে কল করলাম,
-একি রাকিব ভাই, কই হারালে তুমি? এদিকে কি অবস্থা জান?
-সরি সরি, আমি তোমার ওখানেই যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। মাঝখানে আমার এক খালাত ভাই আসছে আমাকে পাহারা দিতে। ওকে অনেক বুঝিয়ে এটা ওটা প্রমিজ করে বনানীতে রাখতে আসছি, এরপরই তোমার এখানে আসার কথা। একটু ওয়েট করো।
ও না আসা পর্যন্ত আমি আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতে থাকি। বাসার পাশেই অনেক লোক জমায়েত দেখে ওদের মধ্যে মিশে যাই, ওদের কথা শোনার চেষ্টা করি। এরপর আমি জানতে পারি যে পুলিশ আর ছাত্রলীগ মেট্রোস্টেশনের উপরেও অবস্থান নিয়েছে। তারা ওখান থেকে গুলি করে মানুষ মারছে। ছাত্ররা তাই আরো ক্ষুব্ধ হয়ে মিরপুর ১০ এর বিআরটিসি এবং মেট্রোস্টেশনে আগুন দেয়। রাকিব ভাই আসার পর তাকে সব খুলে বলি আমি। সে দুপুরে কিছু খায়নি। আমরা দোকান থেকে কিছু একটা কিনতে গিয়ে দেখি তেমন কিছু নেই। রাকিব ভাই স্যান্ডুইচ নিতে চাইল। আমি বললাম,
-এই দোকানের এসব ভাল না। তারচেয়ে আমরা মিরপুর ৬ নাম্বারে যাই। ওখানে ভাল স্যান্ডুইচ পাব। ওখান থেকে ১০ নাম্বারও কাছে, সেই সাথে যেহেতু কমপ্লিট আবাসিক এরিয়া তাই আমাদের জন্য এই পথটাই নিরাপদ হবে।
ও রাজি হলো, আমরা হাঁটার সময় দেখি কৌশিক ডাব খাচ্ছে। আমি তেড়ে গিয়ে ওর ডাবটা নিলাম। একটু পানিও খেলাম। রাকিব ভাই পানি খেল না। ওর জন্য ডাব কাটিয়ে শাস খাওয়ালাম। তারপর এক এক করে ধাপে ধাপে আমরা এগিয়ে গেলাম ৬ নাম্বারের দিকে।
মিরপুর ৬ নাম্বারে গিয়ে সিয়ামের সাথে পরিচয় হলো। সে BUBT তে পড়তো। এখন রাকিব ভাইয়ের টিমে কাজ করে। সে এখানকার পরিস্থিতি বলতে থাকল। আমরা উত্তেজনার মধ্যে খাওয়ার কথা ভুলে গেলাম। ১০ নাম্বারের দিকে আগাতেই দেখি ছাত্ররা বাঁশ ফেলে রাখছে রাস্তার উপর। বাঁশ পেরিয়ে আরেকটু সামনে আগাতেই পরিবেশটা হঠাতই বদলে গেল। আলোর পরিমাণ কম, ল্যাম্পপোস্টগুলো শুকনো মুখে মাথা নিচু করে আছে। চারিদিকে ইট পাটকেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কিছু ছাত্র সারাদিনের ক্লান্তির ছাপ নিয়ে কোন একটা উত্তেজনায় হেঁটে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক। মাথার উপর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ছে আর সাউন্ড গ্রেনেড ফেলছে। প্রতিবার হেলিকপ্টারের সাথে সাথে একদল মানুষের ছোঁটাছুঁটি বাড়ছে, আর সেই সাথে প্রতিরোধের চিৎকার। দশ নাম্বারে পৌছেই দেখি এক সমুদ্র বিপ্লবীর দখলে এই এলাকা। কেউ কেউ আগুনের উপর কাঠ-বাঁশ রাখছে, আবার কেউ কেউ মাঝে মাঝে স্লোগান দিচ্ছে। কেউ কেউ ব্যস্ত হঠাৎ আসা এম্বুলেন্সগুলো তদারকি করতে। এম্বুলেন্সগুলো চেক করার কারণ হিসেবে জানতে পারলাম যে সকালে এম্বুলেন্সে করে পুলিশ অস্ত্র ও খাবার বহন করেছে। এসব অস্ত্র দিয়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর হামলা করে। ছাত্ররা এখন এজন্য খুবই ক্ষুব্ধ। চেক না করে একটা এম্বুলেন্সও তারা ছাড়ছে না। আমি আর রাকিব ভাই কিছু ভিডিও করলাম। আমরা একটা বুলেটের খোসাও পেলাম, তারপর কিছুক্ষণ ভিডিও করে পকেটে রেখে দিলাম। চারিদিকে অনেক হাইস্কুল-কলেজে পড়া মেয়েদের দেখলাম, কিছু পাঁচ-ছয় বছরের বাচ্চাকেও দেখলাম, সবাই বাবা-মার সাথে পরিবারের সাপোর্ট নিয়েই এসেছে। এলাকার কিছু নিপাট ভদ্র মধ্যবিত্ত মানুষকেও দেখলাম, যারা কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে তার বিরুপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে একশ বার ভেবে নেয় অনেক দেরী করে ফেলে। এই লোকগুলোকে দেখে আমার মনে হলো স্বাধীনতার সূচনা আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি উনাদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তাদের বাসা আশেপাশেই। শীক্ষার্থীদের উপর জুলুম সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় নেমে এসেছে। আমি তাঁদের বললাম এলাকার সমস্ত মানুষকে নিয়ে আবাসিক এলাকার রাস্তায় বসে যেতে। এই অভিভাবক শ্রেণীকে আন্দোলন করতে হবে না, শুধুমাত্র আমরা যে বাচ্চাগুলোর এইসব ন্যায় দাবীকে সমর্থন করছি এতোটুকু তাদের জানাতে পারলেই হবে। এক সময় আমার মনে হলো এদের পানি খাওয়ানো উচিত। রাকিব ভাইকে বলতেই লাফ দিয়ে রাজি হয়ে গেল। সিয়ামসহ আমরা তিনজনই পানি কিনতে গেলাম। দুইকেস পানি কিনলাম, দোকানদারকে টাকা দিলাম সে বাকি টাকা ফেরত দিল। দোকানদার খুব উৎসাহ নিয়ে আমাদের পানি এগিয়ে দিল। পানিগুলো রিক্সায় তুলে আসতে আসতে রাকিব ভাই বললো ৯৬০ টাকা নিল তাহলে? আমি বললাম মনে হয়, খেয়াল করিনি। তারপর দুজনে হিসাব করে দেখলাম সে বোতল প্রতি ২০ টাকা করে রাখছে। আমি বললাম পাইকারি রেটও রাখেনি? রাকিব ভাই উত্তরে বলে এরাই ব্যবসায়ী, ব্যবসায় কোন ছাড় নাই। ততক্ষণে আমি একটা গালি দিলাম।
লোকজনদের মধ্যে পানি বিতরণ করলাম। কেউ অতিরিক্ত খেল না। যার নূন্যতম যতটুকু লাগে ততটুকু খেয়ে শেয়ার করল আরেকজনের সাথে। আমার খুব ভাল লাগল। মেট্রোর পিলারে “সৈরাচার নিপাত যাক“ টাইপের একটা লেখা দেখে ছবি তুললাম কয়েকটা। এরমাঝে রাকিব ভাইয়ের একটা ফোন আসল বলে সে সাইডে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর কথা বলে আসতেই তাকে বললাম একটা ছবি তুলে দিতে। সে আমাকে ভৎসনা করল। আমি ওকে বললাম, এগুলো ছবি আন্দোলনের এনার্জি বুস্ট করে। অবশেষে সে আমার ছবি তুলে দিল। “সৈরাচার নিপাত যাক” স্লোগানটার উপর আমি আমার মুষ্টিবদ্ধ হাতের ছায়া রেখে স্বভাবসুলভ ছবি তুললাম। এমন সময় মেট্রোস্টেশনের মিরপুর ১০ এর গোলচত্তরের উলটো প্রান্তে কিছু মানুষ জোরে স্লোগান দিতে থাকল। কিছুক্ষণ পরই কিছু খাবার আসল, কিছু পানি আসল। সবাই খেতে থাকল। একজন উচ্চস্বরে বললো আগামীকাল ১১ টায় আবার আমরা একজায়গায় হবো। আজকের মতো বাড়ি যেতে। রাত তখন প্রায় ৯ টা ছুঁই ছুঁই। হঠাৎ মেট্রোস্টেশনের গোলচত্তরের পাশে থেকে আমাদের দিকে সবুজ লেজার ধরা হলো এবং একটা সাংকেতিক আওয়াজ ভেসে আসল। মুহুর্তেই সবাই খুব দ্রুত সতর্ক মানুষিকতায় চলে গেল। জানতে পারলাম ওরা আমাদের লোক। পুলিশকে দেখে তারা এই আওয়াজ দিয়েছে। অনেকেই গোলচত্তরের দিকে পুরো মিছিল নিয়ে যেতে চাইল। মেট্রোস্টেশনটার নিচে একদম অন্ধকার। কিচ্ছু দেখা যায় না। আমার বুদ্ধিমত্তা সায় দিচ্ছিল না। রাকিব ভাইকে বললাম,
-এই অন্ধকারে আমাদের যাওয়া ঠিক মনে করছ?
-হঠাৎ গুলি শুরু করলে তো আমরা পালাতে পারবো না
-হ্যা, কোনদিকে রাস্তা নেই, এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়লে সবার লাশ পরে থাকবে
আমরা কয়েকজনকে বুঝালাম যেন ওদিকে না যায়। বরং আমরা এপাশে আরেকটু পিছিয়ে আলোতে থাকি যেন ওরা আসতে থাকলে আমরা দূর থেকে দেখে ওদের অবস্থা বুঝে প্রস্তুতি নিতে পারি। এ আন্দোলনের কোন নেতা ছিল না। তাই দুইজনকে বুঝাতেই অন্যদিক থেকে আরো কয়েকজন এগিয়ে যেতে থাকে। সবাই সবার বিবেক-বুদ্ধি, আকাঙ্খা, আপ্রাপ্তি, রাগ থেকে যা ইচ্ছা তাই করছে। অনেকেই মেট্রোর নিচে দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে গোলচত্ত্বরের দিকে এগুতে থাকল। আমি আর রাকিব ভাই দুইজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে এগোনো শুরু করলাম। আমি কয়েকটা ইটের টুকরা নিলাম, রাকিব ভাইও নিল। এরপর রাকিব ভাইকে আমি বললাম,
-বিনাকারণে জীবন দিওনা। আমরা বেঁচে থাকলেও দেশের অনেক উপকার করতে পারব। জীবন যদি দিতেই হয় তবে তার উপযুক্ত বিনিময় মূল্য আদায় করে মরতে হবে।
আমরাও এগোতে শুরু করলাম। আমরা মেট্রোর ডিভাইডারের বাম পাশে ছিলাম। গোল চত্ত্বরে যেতেই দেখতে পাই ডান দিকের স্টেডিয়ামের রাস্তা ধরে একটা বিশাল পুলিশের দল শিল্ডসহ এগিয়ে আসছে। আমি রাকিব ভাইকে বললাম একটা জায়গা ঠিক করতে, এবং গুলি করলে যেন আমরা নিজেদের মত করে পালিয়ে সেই জায়গায় গিয়ে একত্র হই, নইলে অন্ধকারে একজন আরেকজনকে নজরে রেখে দৌড়াতে পারব না। পপুলার হস্পিটালের পাশ দিয়ে অরিজিনাল ১০ এর যে রাস্তা আছে, আমরা সেখানে একত্র হবো ঠিক করলাম। আমাদের এখান থেকে স্লোগান দেয়া হলো। আমি আর রাকিব ভাই সামনের দিকেই। হঠাৎ গুলি করা শুরু হলো, অনেক রকম গুলির শব্দ। সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়াতে শুরু করল। আমিও দৌড় শুরু করলাম আগের জায়গাটায় যাবার জন্য। পাশে তাকিয়ে দেখি রাকিব ভাই নেই। অন্ধকারে কিছু দেখা যায়না। তবুও আমি দৌড়াচ্ছি। গুলি চলছে। আমি ডিভাইডার টপকে লেন চেঞ্জ করলাম যেন আমাকে সহজে পুলিশে নাগালে না পায়। আর ভাবছিলাম রাকিব ভাই একই কাজ করছে তো? অরিজিনাল ১০ এর রাস্তায় পৌছে আমি রাকিব ভাইকে খোঁজা শুরু করলাম। দেখি লোকটা শাখা রাস্তায় না ঢুকে মেইন রোডে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলছে। তার এতো সাহস আমার ভাল লাগল না। আমি তার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় একটা বাঁশ আর একটা কাঠের লাঠি পেলাম। রাকিব ভাইয়ের কাছে এসে তাঁর হাতে বাঁশটা দিলাম। এরপর আমরা ডিভাইডারের উপর দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে গোলচত্তরে তাকালাম। গোলচত্ত্বর পুলিশের দখলে। একটা সাজোয়া যান হঠাৎ এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ডান লেন ধরে এগিয়ে আসতে থাকল আমাদের দিকে। আমরা প্রাণপণে দৌড় দিলাম বাম লেনে। তারপর একটা শাখা রাস্তায় ঢুকে গেলাম। গাড়িটা সামনের দিকে চলে গেল। লোকটা এবারও আমার সাথে নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে একজন বললো এই রাস্তা নিরাপদ না। গতকালও এই গাড়িটা ভেতর দিয়ে ঢুকে এই রাস্তায় কয়েকজনকে গুলি মেরেছে। আমি রাকিব ভাইকে খুঁজতে খুঁজতে আবার মেইন রোডে আসলাম। এসে দেখি উনি আবার ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাবছিলাম উনি কিভাবে এতো দ্রুত আবার এখানে চলে আসল, নাকি সে এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল! আমি উনার পায়ের কাছে লাঠি আর ইটের টুকরো গুলো রেখে একটু সাইডে এসে চাঁদের ছবি তুললাম। এতো সুন্দর চাঁদ আমি বোধয় আলোক দূষণে ভরপুর ঢাকা শহরের এই ধূলিময় আকাশে কখনো দেখিনি। আমি আবার রাকিব ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ভাবলাম এভাবে এলোপাথারি গুলির সামনে লাঠি,ঢিল নিয়ে কিভাবে টিকবো? এক কাজ করি, রাকিব ভাইকে রাস্তার ওপাশে নিয়ে যাই, ৬ নাম্বারের দিকে ওলিগলি বেশি, শেল্টার পাওয়া যাবে ভাল। আবার উনাকে কিছু খাইয়ে নেয়া যাবে। গোলচত্তরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখি পুলিশের সংখ্যা কিছুটা কম। আমি রাকিব ভাইকে বিষয়টা জানিয়ে বললাম বাকিরা মেট্রোস্টেশনের দোতলায় উঠেনি তো? উনি সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দিলেন না। তারপর আমি ৬ নাম্বারে ঢুকার আইডিয়াটা শেয়ার করে রাকিব ভাইকে নিয়ে ডিভাইডার থেকে হেঁটে রাস্তা পার হতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি রাস্তায় তিনজন মহিলা মেট্রো স্টেশনের নিচে দিয়ে গোলচত্তরের দিকে যেতে চাচ্ছে। গোলচত্তরে অনেক পুলিশ দেখা যাচ্ছে। আমরা দুজন মহিলাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-আপা, ওদিকে যায়েন না, শুধু শুধু গুলি খাবেন
এক মহিলা নির্বিকারভাবে উত্তরে বলে,
-গতকাল আমার ছেলে মারা গেছে, আমার জীবনে আর কিছু নাই। আমি যাব ওদের কাছে।
আমি আর রাকিব ভাই আলাদাভাবে দুজনকে দ্রুত বুঝাতে শুরু করলাম। মহিলা দুজন মা-মেয়ে ছিলেন। তৃতীয় মহিলাও শুনছিল পাশে থেকে। হঠাৎ কানে তালা লাগা একটা গুলির আওয়াজ। কিছু বুঝে উঠার আগেই দৌড় দিলাম। দুই তিন ধাপ এগোতেই মহিলাদের চিৎকার শুনতে পেলাম, আমি পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখি রাকিব ভাই শুয়ে আছে, তার গলা দিয়ে রক্তের ফোয়ারা। চাঁদের গায়ে ছোপ ছোপ রক্ত। আমি দুই-এক সেকেন্ড স্তব্ধ থেকে ‘রাকিব ভাই’ বলে চিৎকার করলাম। এরমাঝে আমি বুঝে গেছি খুব ক্রিটিক্যাল জায়গায় বুলেট লেগেছে। মহিলারা রাকিব ভাইকে ধরেছে, আমিও দৌড়ে গেলাম। ততক্ষণে বিভিন্ন শব্দের আরো কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হলো। সেসব কোনদিকে দিয়ে গেল আমি জানিনা। আরো অনেকে রাকিব ভাইকে ধরে হাসপাতালে নিল, ঠিক ৬০-৭০ ফিট দুরেই হাসপাতাল ছিল। আমার ঘোর কাটছে না, আমি দোড়াচ্ছি রাকিব ভাইয়ের সাথে, তাকে ডাকছি। গুলিটা মেট্রোস্টেশনের দোতলা থেকে করা হয়েছে। তার কন্ঠে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। একটা শব্দও বলতে পারছে না। ইমার্জেন্সিতে ডক্টররা গজ দিয়ে ব্যান্ডেজ করলেন, আম্বু ব্যাগ নিয়ে আসলেন, সিপিআর দিলেন। ওরা আমাকে কাছে যেতে দিচ্ছিল না। ইমার্জেন্সি রুমের বাইরে বের করে দেয় বারবার। এরমাঝেও আমি দুইবার ভেতরে ঢুকে আমার ভাইকে ডেকেছি। শেষবার যখন ওরা আমাকে বের করে দিল, আমি বুঝতে পারলাম আমি আমার ভাইকে হারিয়ে ফেলছি। একজন ডক্টর এসে আমাকে জানাল রাকিব ভাই আর নেই। সময় তখন রাত ৯ টা বেজে ২৩ মিনিট। যে মেয়েটা আজ রাকিব ভাইয়ের জন্য বেঁচে গেল সে আমার পাশে এসে কেঁদে কেঁদে অনুশোচনা করতে থাকল। অল্প বয়স মেয়েটার, ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে এসে আরেকজন ভাইয়ের মৃত্যু দেখল। এরপর বেশ কিছুক্ষণ কি হয়েছে আমার মনে নেই। হঠাৎ সিয়ামের ফোন। আমি ফোন ধরে তাকে বলে ফেলি “রাকিব ভাই আর নেই”। এরপর আমি কি করব কিছুই বুঝতেছিলাম না। কৌশিককে কল দিলাম, রিসিভ করলো না। বেশ কিছুক্ষণ পর কৌশিক ফোন ব্যাক করলে আমি তাকে সব বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলি। রাকিব ভাইয়ের বাড়ির ঠিকানা আমি জানতাম। কিন্তু তখন মাথায় আসছিল না। আমি কিভাবে ওর বাবা-মাকে মুখ দেখাব বুঝতে পারছিলাম না। তাদের দুজনেরই বয়স হয়েছে। আন্টির ক্যান্সার, চিকিৎসা চলছে। তাদেরকে এই খবর আমি দিতে পারতাম না। একসময় রাকিব ভাইয়ের বাবা কল করেন তার নাম্বারে। আমার হাত কাঁপে, আমি ফোনটা ধরতে পারিনি। কৌশিকের মাধ্যমে ততক্ষণে আমাদের ভার্সিটির অনেকে জেনে গেছে খবরটা। সিয়াম এসে অনেক কল রিসিভ করে, এবং তার অফিসে কথা বলে রাকিব ভাইকে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে। আমি মনে মনে পালিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম, কোথাও মুখ লুকিয়ে কাঁদতে চাচ্ছিলাম। ঘন্টাখানেক পর আমার চিন্তাভাবনা বদলে যায়। আমি রাকিব ভাইকে একা ফেলে কোথাও যাব না, আমি এই অপরাধী মুখটাও আংকেল আন্টিকে দেখাতে প্রস্তত হলাম। শুনলাম ১২ টা থেকে কারফিউ শুরু। সবকিছু ফাঁকা হয়ে গেল। রাত ১ টার দিকে একটা ফ্রিজার ভ্যান আসল। রাকিব ভাইয়ের এক কলিগের সাথে আমিও গাড়িতে উঠলাম। গাড়িটা ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। উনি পুরো রাস্তায় রাকিব ভাইয়ের প্রশংসা করতে থাকলেন, তার সাথে কেমন ঘনিষ্ট সম্পর্ক সেসব বলতে থাকলেন। উনার ডায়াবেটিস আছে। সেতু পার হয়ে তাই একটু খাবার খেতে নামলেন। আমি আর কোথাও গেলাম না। গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাতে বসে রাকিব ভাইয়ের ফ্রিজার ভ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ওদিকে তার মা শূন্য বুকে অপেক্ষা করছে। এদিকে আমার বুকে এক মস্ত বোঝা আটকে আছে। মাথার মধ্যে সেই ফার্স্ট ইয়ার, সেই রাকিব ভাই, সেই আমরা। একসময় ড্রাইভার স্লাইড ডোর খুলে কিছু একটা দেখছিল। কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখা যায় রাকিব ভাইয়ের রক্ত ছড়িয়ে আছে। আর ফ্রিজার ভ্যানের ঠিক উপরেই বিশাল একটা চাঁদ। এমন জঘন্য চাঁদ আমি কোনদিন দেখিনি। এই মৃত্যুর বিনিময় মূল্য শুধু ওই মেয়েটার জীবন হতে পারে না। এই মৃত্যুর বিনিময় মূল্য হতে পারে স্বাধীনতা, একমাত্র নির্ভুল স্বাধীনতা!
আজ মায়ের বুকটা শূন্য মরু,
রক্তাক্ত আমার ভাই।
রক্ত দিয়েছে বোন আমার,
বল, আর কত মৃত্যু চাই?
কতটা রক্তে তোর হায়নারা-
হিংস্র তৃষ্ণা মেটায়?
কতটা লাশে নেকড়ের দল-
উল্লাসে ক্লান্ত হয়?
কতটা বুলেটে বক্ষ ছেঁদিলে,
কতটা শান্তি পাস?
কতটা কষ্টের আহাজারীতে আজ-
বিদীর্ণ মায়ের আকাশ\!
বাংলা ফুঁসছে কালচে লালে,
সমূলে মারতে চাস?
শূণ্য মাটিতে করবি কিভাবে,
নেকড়ে-হায়নার চাষ?
বল পিশাচিনি, কাল নাগিনী,
আর কত রক্ত চাই?
আর কতটা সাগর পেরিয়ে-
স্বাধীনতা হাতে পাই?
আয় রাক্ষসী জীবন নিবি,
পরিব মৃত্যুর তাজ,
নইলে ছিনিব ঘুম তোর চোখের,
যমদূত হবো আজ\!
বিভীষিকা হবো তোর ক্ষমতায়,
তিলে তিলে নেব শোধ,
ফিরিয়ে দেব এক এক করে-
প্রতিটা মৃত্যুর ক্রোধ\!
বাংলার বুকে উড়বে আবার-
নতুন পতাকা।
আমার ভাই-বোনের রক্ত মাখা-
নির্ভুল স্বাধীনতা\!
\-মাসরুক পিয়াশ
CSE-15